কিয়ামতের ছোট ছোট আলামত যেগুলের বর্ণনা দেওয়া আছে হাদীস শরীফে।


কিয়ামতের ছোট আলামত -১

১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর আগমণ ও মৃত্যু বরণ



কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর আগমণ। কেননা তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পর কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবীর আগমণ হবেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর দুনিয়াতে আগমণের অর্থ হলো, দুনিয়ার বয়স শেষ হয়ে আসছে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। তিনি বলেনঃ
‘‘আমি এবং কিয়ামত এক সাথে প্রেরিত হয়েছি। একথা বলে নবী (সাঃ) হাতের শাহাদাত আঙ্গুল এবং মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন’’।[1]
ফুটনোটঃ[1] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিয়ামতের আলামত।

২) চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ
‘‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে’’। (সূরা কামারঃ ১)
হাফেয ইবনে রজব বলেনঃ ‘‘আল্লাহ তাআলা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়াকে কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম আলামত হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।[1]

আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর যামানায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা সংঘটিত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে একাধিক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ মক্কাবাসীরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে নবুওয়াতের প্রমাণ চাইল তখন তিনি চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন’’।[2]

ফুটনোটঃ
[1] – الحكم الجديرة بالإذاعة: ص ১৯
[2] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ সিফাতুল মুনাফিকীন।
৩) বায়তুল মাকদিস (ফিলিস্তীন) বিজয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি বস্ত্ত গণনা করো। তার মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় অন্যতম।[1]

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)এর শাসনামলে হিজরী ১৬ সালে বায়তুল মাকদিছ বিজয়ের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ভবিষ্যৎ বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে।
ফুটনোটঃ[1] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জিযইয়্যাহ।

৪) ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। ফকীর-মিসকীন খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
সাদকা ও যাকাতের টাকা নিয়ে খুঁজা-খুঁজি করেও নেয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যতক্ষণ না মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। মানুষ যাকাতের মাল নিয়ে সংকটে পড়বে। যাকাতের মাল মানুষের কাছে পেশ করা হলে সে বলবেঃ এতে আমার কোন প্রয়োজন নেই’’।[1]

কিয়ামতের এই আলামতটি একাধিক সময়ে প্রকাশিত হবে। উমার ইবনে আব্দুল আযীযের শাসন আমলে তা প্রকাশিত হয়েছিল।

ইয়াকূব ইবনে সুফিয়ান বলেনঃ ‘‘উমার ইবনে আব্দুল আযীযের শাসন আমলে লোকেরা প্রচুর সম্পদ নিয়ে আমাদের কাছে আগমণ করতো। তারা আমাদেরকে বলতঃ তোমরা যেখানে প্রয়োজন মনে কর সেখানে এগুলো বিতরণ করে দাও। গ্রহণ করার মত লোক না পাওয়া যাওয়ার কারণে তাদের কাছ থেকে কেউ মাল গ্রহণ করতে রাজী হতোনা। পরিশেষে মাল ফেরত নিতে বাধ্য হত। মোট কথা তাঁর শাসন আমলে যাকাত নেয়ার মত লোক ছিলনা’’।[2]
কিয়ামতের এই আলামতটি ইমাম মাহদীর আমলে পুনরায় প্রকাশিত হবে।
ফুটনোটঃ[1] – মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত। [2] – ফাতহুল বারী, (১৩/৮৩)

৫) কিয়ামতের পূর্বে অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে
ফিতনা শব্দটি বিপদাপদ, বিশৃংখলা, পরীক্ষা করা ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। অতঃপর শব্দটি প্রত্যেক অপছন্দনীয় বস্ত্ত ও বিষয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘এই উম্মতের প্রথম যুগের মুমিনদেরকে ফিতনা থেকে হেফাজতে রাখা হয়েছে। আখেরী যামানায় এই উম্মতকে বিভিন্ন ধরণের ফিতনায় ও বিপদে ফেলে পরীক্ষা করা হবে। প্রবৃত্তির অনুসরণ ফির্কাবন্দী এবং দলাদলির কারণে ফিতনার সূচনা হবে। এতে সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যাবে এবং ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হবে। একে অপরের উপর তলোয়ার উঠাবে। ব্যাপক রক্তপাত ও প্রাণহানি ঘটবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল ফিতনা সম্পর্কে উম্মতকে সাবধান করেছেন এবং তা থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।

আমর বিন আখতাব (রাঃ) বলেনঃ একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজর নামায পড়লেন। অতঃপর মিম্বারে উঠে যোহর নামায পর্যন্ত ভাষণ দিলেন। যোহর নামায আদায় করে পুনরায় ভাষণ শুরু করে আসর নামায পর্যন্ত ভাষণ দান করলেন। অতঃপর আসর নামায শেষে ভাষণ শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ভাষণ দিলেন। এই দীর্ঘ ভাষণে তিনি কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত যা হবে সবই বলে দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে জ্ঞানী তারাই এগুলো মুখস্থ রেখেছেন’’।[1] ফিতনাগুলো একটি অপরটির চেয়ে ভয়াবহ হবে।
এমনকি ফিতনায় পড়ে মানুষ দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের পূর্বে অন্ধকার রাত্রির মত ঘন কালো অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে। সকালে একজন লোক মুমিন অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে। বিকালে সে কাফেরে পরিণত হবে। বহু সংখ্যক লোক ফিতনায় পড়ে দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে তাদের চরিত্র ও আদর্শ বিক্রি করে দিবে।[2] অপর বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের একজন দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে’’।[3]



👤Post by: MD Jakaria
🕙Posted at: January 15 2020






POST VIEWSl

website counter








Next Post Prev Post

Facebook

Get the latest article updates from this site via email for free!