মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দারুন একটা বই

হ্যালো ব্রো, স্বাগতম, সবাইকে, আমার আজকের আরেকটা নতুন টিউটোরিয়ালে । আশা করি সবাই খুবই ভালো আছেন। ভালো তো থাকারই কথা, কারন trickbd র সাথে থাকলে সবাই খুব ভালো থাকে । আর ভালো থাকার জন্যই মানুষ ট্রিকবিডিতে আসে। চলুন শুরু করা যাক।

বইয়ের নামঃ– আমার বন্ধু রাশেদ
লেখকঃ– মুহাম্মদ জাফর ইকবাল
বইয়ের ধরনঃ– কিশোর উপন্যাস
প্রকাশকঃ– শরীফ হাসান তরফদার
প্রকাশনীঃ– জ্ঞানকোষ প্রকাশনী
প্রকাশকালঃ– ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫
প্রচ্ছদঃ– ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ– ১১২ পৃষ্ঠা
মুদ্রিত মূল্যঃ– ২৫০ টাকা মাত্র

লেখক পরিচিতিঃ–

সমকালীন কথাসাহিত্যিক বা বিজ্ঞানমনস্ক লেখকের কথা বললেই চলে আসে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কথা। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৫২ সালের ২৩’শে ডিসেম্বর, সিলেটে। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন’ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ এবং ‘বেল কমিউনিকেশান্স’ রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ ১৮’বছর পর দেশে ফিরে এসে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগে। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন৷ সাহিত্যজীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও কিশোর সাহিত্য; তাদের মধ্যে ‘নিঃসঙ্গ গ্রহচারী’, ‘আমি তপু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘টুকুনজিল’ ও ‘দীপু নাম্বার টু’ অন্যতম।

চরিত্র পরিচিতিঃ– রাশেদ, আশরাফ, ফজলু, অরু আপা, শফিক ভাই, ডাক্তার সাহেব, ইবু, কাজল ভাই ও অন্যান্য।

সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ–

দুষ্টু এক ছেলে! নাম তার রাশেদ। অবশ্য পারিবাদের দেয়া নাম লাড্ডু কিন্তু ক্লাসটিচার নামটা পাল্টে নাম রেখেছেন রাশেদ। রাশেদের মা নেই, বাবা জাত পাগল তাই ছন্নছাড়াদের মতোই জীবনযাপন তার। নতুন ক্লাসে এসে বেশ কয়েকজনের সাথে ভাব জমিয়ে নেয় এদের মধ্যে আছে ফজলু, ইবু, আশরাফ, দিলীপও। বয়স আর কত হবে এই বারো কী তেরো কিন্তু বিপদের সময় সে অকুতোভয় এক দুঃসাহসী বালক! এই বয়সে অন্যান্য ছেলেমেয়েরা যেখানে রাজনীতির নাম শুনলেও ভয় পায় সেখানে রাশেদের রাজনীতির জগতেও পদার্পণ রয়েছে। পাড়া-মহল্লার গুরুত্বপূর্ণ সব খবরাখবরই থাকে তার নখদর্পনে।

ঘটনাটা মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রীক; চারদিকে মুক্তিযুদ্ধের দামামা বাজছে; এমনকি গ্রামগঞ্জেও তার নৃশংসতা চলমান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শুধু বড়রাই যুদ্ধ করেছে তা নয়, ছোটরাও বড়দেরকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। তাদের মনেও সাধ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের সুনাগরিক হবার। তাইতো তাদের মুখেও উচ্চারিত হত, “আমার দেশ, তোমার দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ” বা “জয় বাংলা”র ন্যায় বলিষ্ঠ শ্লোগানগুলি।

তেমনি রাশেদ আর তার চার বন্ধু মিলে দেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীর সাথে। ছোট-ছোট অপারেশনে যোগদান করে। বয়সে ছোট হলেও হানাদার বাহিনীর সামনে তারা যেন তুখোড়! উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, এক রাতে বাসা থেকে পালিয়ে শফিকের সাথে রাতে মিলিটারি ক্যাম্পে হামলা করার কাহিনীর কথা, শফিককে মিলিটারিদের হাত থেকে বাঁচিয়ে আনাসহ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ক্রমশ দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে এক এক করে দেশ ছাড়তে হয় অনেককে। অন্য বন্ধুরা চলে গেলেও রাশেদ কোথায় যায় না। সে শেষ পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়না তার….. ডিসেম্বরের প্রথমদিকে রাজাকারদের  হাতে ধৃত হয়ে প্রাণ দিতে হয় তাকে।

আমার নিজস্ব মতামত:

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যতগুলো বই পড়েছি তার মধ্যে আনোয়ার পাশা’র ” রাইফেল রোটি আওরাত” আর মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের “আমার বন্ধু রাশেদ” পড়ে সবথেকে বেশী শিহরিত হয়েছি। যুদ্ধ যে কোনো ছেলেখেলা নয় সেটা সবাই’ই জানি কিন্তু যুদ্ধ করতে কোনোপ্রকার সময়সীমার প্রয়োজন হয়না তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রাশেদ! এত ছোটো একটা ছেলে কী করে এতটা সাহসী আর অকুতোভয় হতে পারে আর কতটা দেশপ্রেম থাকলে এসব করা সম্ভব তা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বাস্তবে রাশেদ বলে কেউ ছিলো কিনা তা জানা নেই তবে দেশমাতার প্রয়োজনে তখন এমন হাজার হাজার রাশেদের জন্ম হয়েছিলো তা স্পষ্ট।

“নমোনমো নমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি—
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।”

এছাড়াও প্রেম-ভালোবাসার থীমও ও দুটি মনের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতিরূপও পাওয়া যায় শফিক আর অরুর চরিত্রে। লেখকের অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘরেছে দিলীপের চরিত্রের মাধ্যমে। হিন্দু-মুসলমান কীভাবে একে অপরের সাথে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসাথে বসবাস করেছে তা পরিলক্ষিত হয় উপন্যাসটির মধ্যে। বিংশ-একবিংশ শতাব্দীর কোনো লেখকের থেকে মুক্তিযুদ্ধের এরকম অতুলনীয় একটা দৃশ্যপট লেখনি হিসেবে পাওয়া যায় সেটা সত্যিই চমকপ্রদ! রাশেদ ও তার বন্ধুদের সাহসিকতার গল্প পড়ে নিজের মনেও এর ছাপ পড়েছে। মনে হয়েছে, “ইসস যদি তাদের সাথে যোগ দিতে পারতাম।”

প্রচ্ছদঃ

প্রচ্ছদটা কিছুটা অস্পষ্ট। লেখক হয়তো নিজের কল্পলোক থেকে কাউকে বাছাই করেছেন চরিত্র হিসেবে সেটা একটা কারণ হতে পারে। তবে যে’ই হোক না কেন সে যে অসম্ভব মনোবল আর সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে সেটা প্রচ্ছদেই ফুটে উঠেছে।

কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ লাইনঃ

— তুই আমার বন্ধু হবি?
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, কেন? আমি কি তোর বন্ধু না?
একেবারে প্রানের বন্ধু। সারা জীবনের বন্ধু। মরে গেলেও যে বন্ধু থেকে যায় সেই বন্ধু। হবি?
আমি মাথা নাড়লাম, হব।

–নিষিদ্ধ জিনিস দেখার একরকম আকর্ষণ থাকে।

— বেঁচে থাকা মানেই ভালো থাকা।

পার্সোনাল রেটিংঃ– ৯/১০.

যাই হোক আশা করছি যে, আপনারা বইটি পড়বেন এবং এটাও আশা করছি যে বইটি অবশ্যই আপনার কাছে ভালো লাগবে l যারা লাইব্রেরী থেকে কিনে নিতে চান তারা তো অবশ্যই বইটি কিনে নিবেন l আর ট্রিকবিডি তে বর্তমানে কপিরাইট ইস্যু থাকায় আমি বইটির সরাসরি পিডিএফ দিতে পারলাম না l কারো যদি পিডিএফ এর দরকার হয় তাহলে দয়া করে গুগলে সার্চ করে নিবেন l আর যদি খুঁজে না পান তাহলে আমাকে ইনবক্সে নক দিবেন আমি লিংক দিয়ে দিব l তাছাড়াও যারা অনলাইনে কেনাকাটা করেন তারা চাইলে রকমারি থেকে কিনতে পারেন, অথবা ফেসবুকে বিভিন্ন বুকস শপ রয়েছে যেগুলোতে বাতিঘরের বইগুলোতে প্রায় সময় ডিসকাউন্ট দিতে দেখা যায়। আপনারা চাইলে ওইগুলো থেকেও বইটি কিনে নিতে পারেন।

আমার আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি।

মানুষ মাত্রেই ভুল হয় , তাই পোষ্টে কোন ভুল থাকলে দয়া করে মাপ করে ‍দিয়েন, আর প্লিজ কমেন্টে লিখে ভুলগুলা শোধরানোর সুযোগ করে ‍দিয়েন।
কোন কিছু না বুঝলে বা কোন কিছু জানার থাকলে, আমাকে কমেন্টে জানান।

আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনি আমাদের ফেইসবুক গ্রুপে জয়েন হতে পারেন l

আর যেকোন প্রবলেমে ফেসবুকে আমি
তাহলে সবাইকে ট্রিকবিডির সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রন জানিয়ে আজকে আমি আমার আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।



The post মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দারুন একটা বই appeared first on Trickbd.com.








POST VIEWSl

website counter








Next Post Prev Post

Facebook

Get the latest article updates from this site via email for free!