হাইড্রোজেন পারআক্সাইড কী চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড আগুনে বিস্ফোরকের মতো কাজ করেছে?

হ্যালো ভাই ব্রাদার্স 😍

কেমন আছেন সবাই?
আশা করি ভালো আছেন!

H2O2 কি?

হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল, জলের থেকে এর সান্দ্রতা সামান্য বেশি। নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় এটার জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। H2O2 সব থেকে সরল পারক্সাইড (যে যৌগে অক্সিজেন-অক্সিজেন একক বন্ধন থাকে) এবং এটা শক্তিশালী জারক ও বিরঞ্জক। গাঢ় H2O2 রকেটের জ্বালানীতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড সংক্রমণনাশক। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে কাজ করে। ১৯২০ সাল থেকে এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইডে অতিরিক্ত একটি অক্সিজেন থাকে।
আলেকজান্ডার ভন হাম্বোল্ট বাতাসের পচে যাওয়ার তার প্রচেষ্টার উপ-পণ্য হিসাবে ১৭৯৯ সালে প্রথম কৃত্রিম পারক্সাইড, বেরিয়াম পেরক্সাইডের মধ্যে একটি সংশ্লেষিত করেছিলেন।

উনিশ বছর পরে লুই জ্যাক থনার্ড স্বীকৃতি দিয়েছিলেন যে এই যৌগটি পূর্বে অজানা যৌগ তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা তিনি ইও অক্সিজিনি (ফরাসী: অক্সিজেনযুক্ত জল) হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন – পরবর্তীকালে হাইড্রোজেন পারক্সাইড হিসাবে পরিচিত।

H2O2 কিভাবে সংরক্ষণ করা দরকার

H2O2 ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে বিপজ্জনক হয়ে উঠে।চট্টগ্রামের সিতাকুন্ডের গুলো ৬০% ঘনত্ব ছিল। এই ঘনত্বের

H2O2 সংরক্ষণ করতে হয় অন্ধকার, সুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায়। যেখানে তাপ খুব কম হবে।

H2O2 কি বিস্ফুরণ হিসেবে কাজ করেছে?


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কথিত পিএইচডি গবেষকের লেখা বলে একটি সংগৃহীত পোস্ট ঘুরছে, যেখানে বলা হয়েছে, পানির অক্সিজেন থেকে আগুন আরও বাড়বে। সুতরাং ফায়ার সার্ভিসের পানি ব্যবহার করা উচিত হয়নি এই আগুন নেভাতে। ডিএমপির পরিচালক নাম দিয়ে আরেকটি ‘রেড অ্যালার্ট’ শিরোনামের লেখা শেয়ার হচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি হলে যেন কেউ বাইরে না যায়। কারণ অ্যাসিড-বৃষ্টি হবে। এ কথাগুলো পড়ে পুরোনো একটি প্রবাদ মনে পড়ল, ‘সত্য জুতা পরতে পরতে মিথ্যা সারা পৃথিবী দশবার ঘুরে আসে’।

মাধ্যমিক পর্যায়ে রসায়ন পড়া যে কেউ জানে, পানি হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন দিয়ে তৈরি। তাহলে পানি ভেঙে কি অক্সিজেন বের করা যায়? যায়, কিন্তু সেটার জন্য প্রচুর শক্তি লাগে, যেটা আগুন থেকে পাওয়া যায় না। সেটা যত বড় আগুনই হোক না কেন। আগুনে যদি সেই পরিমাণ শক্তি থাকে, তাহলে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের বন্ধন ভাঙার আগেই পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে এবং আগুনের তাপ কমতে থাকবে। হাইড্রোজেন পারক্সাইড নিজেও পানিকে ভাঙতে পারে না। সুতরাং ওই লেখায় ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বিস্ফোরণ হলো কিসের মাধ্যমে এবং আগুন ধরল কীভাবে? হাইড্রোজেন পারক্সাইডের রাসায়নিক ফর্মুলা হচ্ছে

H2O2, পানির

H2O। অর্থাৎ এর প্রতিটি অণুতে পানির চেয়ে একটি অক্সিজেন পরমাণু বাড়তি আছে। এই বাড়তি অক্সিজেনকে ধরে রাখা একটু কঠিন। সময়ের সঙ্গে তা ভেঙে পানি ও একটি মুক্ত অক্সিজেন পরমাণু তৈরি করে। আর সেই মুক্ত অক্সিজেন সুযোগ পেলেই অন্য কিছুর সঙ্গে বিক্রিয়া করার চেষ্টা করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় আরেকটি মুক্ত অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে। ফলে দুই পরমাণুবিশিষ্ট একটা অক্সিজেন অণু তৈরি হয়। সেটিও আগুনের জন্য সহায়ক, কিন্তু মুক্ত অক্সিজেন পরমাণুর মতো অত আগ্রাসী নয়। এই ভেঙে যাওয়া ও অক্সিজেন তৈরি হওয়া থেকে কীভাবে সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছি, সেটা একটু পরে বলছি।

হাইড্রোজেন পারক্সাইড সব সময় বিপজ্জনক নয়। এটি এর ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে। পারলারে যে চুল ব্লিচ করা হয় হাইড্রোজেন পারক্সাইড দিয়ে, সেটা ঘটে এই বাড়তি অক্সিজেনের কারণে। চুলের মেলানিনের ইলেকট্রন আকর্ষণ করে নেয় এই অক্সিজেন। ফলে মেলানিন ভেঙে যায়। চুল সাদা বা সোনালি হয়ে যায়। দাঁতের হলুদ দাগ তোলার জন্যও হাইড্রোজেন পারক্সাইড ব্যবহার করা হয়। চামড়া কেটে গেলে সেখানেও হাইড্রোজেন পারক্সাইড ব্যবহার করা হতো এককালে। কারণ, একইভাবে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের দেয়ালের ইলেকট্রন কেড়ে নিয়ে সেটাকে মেরে ফেলে বা ভেঙে দেয় হাইড্রোজেন পারক্সাইড। তবে শতকরা ৪০ ভাগের বেশি ঘনত্বের হাইড্রোজেন পারক্সাইড খুব আগ্রাসী একটা রাসায়নিক হতে পারে।

আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছবিতে দেখেছি, কনটেইনার ডিপো থেকে উদ্ধার করা হাইড্রোজেন পারক্সাইডের নীল পাত্রগুলোর লেবেলে শতকরা ৬০ ভাগ ঘনত্ব লেখা; অর্থাৎ এই ঘনত্বের হাইড্রোজেন পারক্সাইড অতি সাবধানে রাখা উচিত। সময়ের সঙ্গে, বিশেষ করে যদি তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তাহলে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ভেঙে পানি ও অক্সিজেন তৈরি হবে এবং পাত্রে চাপ বাড়তে থাকবে।
বিভিন্ন খবরে এসেছে, বিস্ফোরণের আগে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। সেই আগুন কীভাবে ধরেছে, তা কেউ জানে না। ওই ডিপোতে অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ছিল, সেটা ধরেই নেওয়া যেতে পারে। কারণ ইট, সিমেন্ট বা টিনের বিল্ডিংয়ে দাহ্য পদার্থ না থাকলে এত সময় ধরে আগুন থাকার কথা না। তারপর তাপমাত্রা বেড়েছে, হাইড্রোজেন পারক্সাইড থেকে অক্সিজেন মুক্তি পেয়ে বের হয়েছে এবং ঘটেছে বিস্ফোরণ।
হাইড্রোজেন পারক্সাইড মজুত ও সাবধানতার ব্যাপারে বলা হয়, ১ লিটারের পাত্রে রাখা হাইড্রোজেন পারক্সাইড যদি ভাঙতে থাকে, তা থেকে ২০০ লিটার অক্সিজেন বের হবে; অর্থাৎ তার জন্য হয় ২০০ গুণ বেশি জায়গা লাগবে, নয়তো সেই পাত্রের ভেতরের চাপ ২০০ গুণ বেড়ে যাবে। তখন যদি পাত্রের কোনো ত্রুটি থাকে, সেই চাপে পাত্রে ফাটল ধরবে।

হাইড্রোজেন পারক্সাইডের আগুন তেলের বা বৈদ্যুতিক আগুন নয়। তাই তা নেভাতে পানিই ব্যবহার করা প্রয়োজন এবং যদিও এটি একধরনের রাসায়নিক, অন্য রাসায়নিকের মতো ফোম অগ্নিনির্বাপক, যা তেলের আগুনে ব্যবহার করা যায়, সেটি এখানে কাজ করবে না।

আগুন লাগার জন্য তিনটি জিনিস আবশ্যক। উত্তাপ, জ্বালানি ও অক্সিজেন। এটাকে আগুনের ত্রিভুজ বা ফায়ার ট্রায়াঙ্গল বলা হয়। এই ত্রিভুজের তিনটি জিনিসের যেকোনো একটি বন্ধ করে ফেললে আগুন নিভে যায়। সাধারণ কেমিক্যাল আগুনে ফোম বা অন্য কেমিক্যাল, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে বাতাসের অক্সিজেনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে আগুন নিভে যায়। এখানে অক্সিজেনের সরবরাহ আসছে হাইড্রোজেন পারক্সাইড থেকে। সুতরাং ফোম দিলে কোনো লাভ হবে না; বরং ফোমের নিচে অক্সিজেনের সরবরাহ চলতে থাকবে এবং উত্তাপ আরও বাড়বে।

তার বদলে পানি দিলে দুটি কাজ হবে। তাপমাত্রা কমতে থাকবে এবং হাইড্রোজেন পারক্সাইডের ঘনত্ব কমতে থাকবে। ফলে অক্সিজেনের সরবরাহ কমতে থাকবে। এভাবে একসময় আগুন নিভে যাবে।

আগেই বলা হয়েছে, পারলারে চুল ব্লিচ করা হয়, ডেন্টিস্টের কাছে দাঁত সাদা করা হয়, এমনকি কেটে গেলে ক্ষত পরিষ্কার করা হয় হাইড্রোজেন পারক্সাইডের দ্রবণ দিয়ে। বৃষ্টিতে দ্রবীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যাওয়া হাইড্রোজেন পারক্সাইড শরীরে পড়লে তাই কোনো ক্ষতি হবে না।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে এই আগুন নেভাতে গিয়ে ঠিক কাজই করেছেন এবং তাঁদের অনেকে প্রাণ দিয়েছেন নিজের কাজ করতে গিয়ে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা এসব ভুল ও অসত্য খবর প্রথমে শুরু করেছেন, তাঁদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আর যাঁরা না জেনে এগুলো ছড়াচ্ছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, মৃত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এসব ভুয়া খবর ছড়ানো বন্ধ করুন।

বিঃদ্রঃ এখানে সব তথ্য সংগ্রহ করা।আমার বাড়ি সীতাকুণ্ডের পাশেই। উপরের তথ্য গুলো সেখান থেকে সংগ্রহ করা।
কোন ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

JABER

আমি চাই পোস্টটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে জানাবেন l ভাল লাগলে
একটা লাইক দিয়ে কমেন্ট
করবেন।



The post হাইড্রোজেন পারআক্সাইড কী চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড আগুনে বিস্ফোরকের মতো কাজ করেছে? appeared first on Trickbd.com.








POST VIEWSl

website counter








Next Post Prev Post

Facebook

Get the latest article updates from this site via email for free!